হারানো মেঘ

-অয়ন গুঁই

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে একটা অদ্ভুত নস্টালজিয়া মেঘকে গ্রাস করছিল। প্রায় দশ বছর পর কলকাতায় ফিরলো সে। প্রথমে ভেবেছিল গাড়ি করেই বাড়ি ফিরবে। তারপর ভাবলো না ট্রেনে করে ফিরবে। অনেকবছর হয়ে গেল শিয়ালদাহ মেইন লাইনে ট্রেনে ওঠা হয়নি। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের মনেই হেসে উঠলো। বয়স বেড়েছে অনেকটাই, চুলেও পাক ধরেছে, কিন্তু সেদিনের সেই খামখেয়ালি মেঘ আজ এত বছর পরেও একই রয়ে গেছে। যে হাজার চেষ্টা করেও সময়ের সাথে সাথে চারপাশের কিছু মুখোশ পরা তথাকথিত মানুষগুলোর মত বদলে যেতে পারেনি। সন্ধে হবে হবে করছে সেই পুরোনো শিয়ালদাহ স্টেশন, হাজার মানুষের ছোটাছুটি একইরকম রয়ে গেছে। আপের একটা ট্রেন স্টেশন ঢুকছে দেখে সেই ফেলে আসা দৌড়ে ট্রেন এ উঠে জানলার ধারের সিট নেবার ইচ্ছে জেগে উঠলো। মেঘ কিছু না ভেবে দৌড়ে চলন্ত ট্রেন এ উঠে সিট পেয়েও গেল। একটা অদ্ভুত খুশিতে মনটা ভরে গেল। যাক। বুড়ো হয়নি তাহলে।

ট্রেন ছাড়লো সেই একই রকম বাদাম, দিলখুশ একই রকম হকার।একটা দিলখুশ খাবে না করেও নিয়ে খেতে শুরু করলো। নতুন সঙ্গী সুগার এর কথা ভেবে আবার হেসে ফেলল মেঘ।ট্রেন বিধাননগর ক্রস করছে, মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সল্টলেকের পুরোনো অফিসের দিনগুলো।

ডিসেম্বর এর প্রথম তাও ঠান্ডা নেই। হাওয়া খেতে খেতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই। হটাৎ ঘুমটা ভেঙে দেখে ট্রেন কোনো একটা স্টেশন এ দাঁড়িয়ে। স্টেশন এর নামটা দেখে না চাইতেও নিজের অজান্তে কখন যে নেমে দাঁড়ালো মেঘ প্লাটফর্ম এ খেয়াল নেই। এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল অতি পরিচিত সেই চায়ের দোকানে। মুখস্থ বুলির মতো বলে ফেললো দুটো চা আর একটা সিগারেট। দোকানি অবাক হয়ে বলল দাদা আপনি তো একা? মেঘ বলল ও তাইতো, আসলে এই দোকানে কখনো একা চা খাইনি তো। চায়ের ভাঁড় আর হাতে সিগারেটে টান দিতে গিয়ে কেসে উঠলো। আসলে সে ভুলে গেছিলো যে পাঁচ বছর হয়ে গেল গলায় ইনফেকশন এর কারণে সে সিগারেট ছেড়ে দিয়েছে।

Photo Courtesy: pixabay.com

কি যে হলো হঠাৎ করে আজ মেঘের কে জানে, যে কারণে দশ বছর আগে কলকাতা ছাড়া, সব ভুলে কাজের মধ্যে এই শহর থেকে অনেক দূরে দিন রাত নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। আজ এত বছর পরে কেন সেই জায়গায় আবার দাঁড়িয়ে। সেই প্লাটফর্ম এর শেড এর নিচে। না চাইতেও গিয়ে বসলো সেখানে পিলার এ হেলান দিয়ে। কেও যেন কানের কাছে মুখ এনে বলল পারলে না তো জিততে। না চাইতেও কি মেঘের চোখের কোনটা একটু জলে চিকচিক করলো? আঙুলের টোকায় জলটা ফেলে একটু জোরেই হেসে উঠলো। আর স্বগতোক্তি করলো “সব মেঘে যে বৃষ্টি হয় না………….”

Disclaimer: The opinions expressed in this post are the personal views of the author. They do not necessarily reflect the views of www.kolkatafusion.com. Any omissions or errors are the author’s and KolkataFusion does not assume any liability or responsibility for them.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *