স্বাগতা ভট্টাচার্য্য
Guest Post
NETFLIX প্রযোজিত ড্রামাটিক স্যাটায়ারের গল্প বুলবুল। অসামান্য অভিনয় দক্ষতা, অসামান্য সিনেমাটোগ্রাফি র মধ্য দিয়ে পরিচালক তুলে ধরেছেন ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ভারতীয় সমাজের নারীর অবস্থান। পুরুষ তান্ত্রিক জাত নিয়ন্ত্রিত সমাজে বাল্য বিবাহ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। একাধারে বাল্য বিবাহ , অন্যদিকে বিধবা মুণ্ডন, পরিবারের মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের সঙ্গে পরিণত মনের বিবাহ শুধুমাত্র শাড়ি, গয়না আর কর্তৃত্বর কারণে। যেখানে কখনও কখনও শরীর সুখ লাভ করেছে বৈধতা। আর এর বিপরীতে গড়ে উঠেছে ছোটবেলার সারল্য, বন্ধুত্ব, একাকীত্বের জিয়ন কাঠির ঠাকুরপো – বৌঠানের নিখাদ ভালোবাসা। শুধু ঠাকুরবাড়ীর অনুকরণেই ভারতবর্ষের বড় পরিবার গুলো সাক্ষী থেকেছে এ জাতীয় পরিণতিহীণ প্রেমের।
কাদম্বিনী , চারুলতা, বিমলা থেকে শুরু করে বুলবুল এরা সকলেই তকমা পেয়েছেন “কলঙ্কিনী রাধার”। আর কলঙ্কিনীদের নেপথ্যে থাকা কানুরা হারামজাদাই থেকে গেলেন সারাটা জীবন। কানু ওরফে কৃষ্ণ ক্ষেত্র বিশেষে রাধা কে যেভাবে ব্যবহার করলেন , সেটা চিরন্তন স্ট্র্যাটেজি হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু বুলবুল সিনেমায় নিষ্পেষিত নারী জাতিকে রক্ষা করতে অযাচিত ভাবে একজন ডাইনি বা ‘চুড়েল’ কে চিত্রিত করা হল। সংঘাত এখানেই। যখন আমরা লিঙ্গ বৈষম্যের ঊর্ধে উঠে লিঙ্গ সমতার কথা বলছি, সিনেমা, সাহিত্য, সংস্কৃতি তে মহিলাদের ভূমিকা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, মিলেনিয়াম পলিসি মেকিং এ মহিলা দের ক্ষমতায়ণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন বুলবুল দের দেখানো হচ্ছে ‘চুড়েল’ বা ডাইনি হিসাবে। চারুলতা দূরবীন দিয়ে চিক সরিয়ে বাইরের পৃথিবী দেখেন। বিমলা রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের জন্য বাড়ির গণ্ডি পেরিয়ে সন্দীপের হাতে অর্থ তুলে দেন আর বুলবুল প্রচলিত সমাজের মুখে ধোঁয়া উড়িয়ে শাস্তি দেন সমাজের তথাকথিত নিয়ন্ত্রকদের।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু বা মধ্য গগনে দেশ জুড়ে বিশেষত বাংলাদেশ জুড়ে মহিলারা যে আবৃত ক্ষমতায়ণকে ভোগ করেছিলেন তা অস্বীকার করার নয়। চিকের অন্তরালে থেকে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার কারিগর ও হয়েছিলেন। বঙ্কিমের দেবী চৌধুরানী, ইন্দিরা এরা সকলেই ছিলেন বহমান সমাজের অন্তরলালিত নারিশক্তি। সেই শক্তিকে কিন্তু সহজে দমন করতে পারেনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। সেই সময়কার বিশ্লেষণে তৈরি হওয়া বুলবুল কিন্তু হেরে গেল যুগান্তরে এসে। সংঘাত এখানে চিরকালীন হয়ে উঠেছে। সিনেমায় চিত্রায়িত হয়েছে সময়ের অতলান্তে গুঁড়িয়ে যাওয়া নারীসত্তা। এক শরীর ব্যবহৃত হয়ে যায় বহু পুরুষে ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়। আবৃত, অনাবৃত সত্য উত্থাপন হয় ইতিহাস থেকে সিনেমায়। সভ্যতার চিরকালীন সংঘাতে জিতে যায় পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। আর অসম্ভবের দাপটে হেরে যায় সম্ভবনাময় বুলবুলরা। সমাজে তাদের স্থান ‘চুড়েল’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ডাইনি হত্যার মতই বুলবুল কেও পুড়িয়ে মারা হয় আগুনে। সিনেমার শেষে ঠাকুরমশাই কে শাস্তি দেয় রক্ত মাংসের বুলবুল নয়, ‘চুড়েল’ বুলবুল। কোথায় যেন যুগ, সময় আর অভিজ্ঞতার সাগরে হারিয়ে যায় জেন্ডার ইকুইলিব্রিয়ামের ফিমেল নামক সমতা। জিতে যায় সভ্যতার পুরাকালের সংঘাত।
Disclaimer: The opinions expressed in this post are the personal views of the author. They do not necessarily reflect the views of KolkataFusion. Any omissions or errors are the author’s and KolkataFusion does not assume any liability or responsibility for them.
Recommended Read: Bulbbul Review by the team of KolkataFusion.