A room With A Door And A Window

চার আনার কামরা

-সরসিজ বসু মল্লিক (অতিথি লেখক)

একটা ছোট কামরা । না রেলগাড়ির কামরা নয় ।এটা বড়ো মাপের একটা ঘরের অংশ ।ঘরটার মাঝে একটা দেয়াল দিয়ে বারো আনা আর চার আনা দুটি অংশে ভাগ করা । আমরা চার আনার অংশটা কে কামরা বলছি । ঘরটাকে এইভাবে ভাগ করার কারণ, বারো আনার ঘরটাকে ভাড়া দেওয়া । ভাড়া খুবই কম ।তবে ভাড়ার অর্থ মালিকের একটি আয়ের উৎস।

ঘরের মালিক লোকটার বয়স প্রায় ছাব্বিশ । রোগা রোগা হাত পা । মুখটা  শীর্ণ । পকেটে থাকা ওয়ালেটের অবস্থা আরো করুন । চার আনার কামরার সিলিংএর কিছুটা চোকলা উঠে গেছে । ঘরের কোনের বেসিনের পাইপ এ  কিছু সমস্যা আছে । জল পড়ছে টপ-টপ করে । শব্দও হচ্ছে ।

লোকটা পাঁচ তারা হোটেলে বেহালা বাজায় । ছ’ বছরের হতাশা ওর মুখে জুটিয়েছে লম্বাটে সিগেরেট । আর যৌবন পরিণত হয়েছে সিগেরেটের ছাই তে । ক্যালেন্ডারের ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মতো সেও আটকে পড়েছে । রোজ রোজ হোটেলে সস্তা হিন্দি সুর বাজাতে বাজাতে হাঁফিয়ে গেছে  ও । এ যেন এক চক্রব্যূহ , সাজানো হয়েছে  তাকে ঘিরে । স্বপ্নের কাছে পরাজয় অবশ্য তার গা-সওয়া হয়ে গেছে । গা-সওয়া হয়ে গেছে  এই আলো-আঁধারি নির্বাসন ।

To read more interesting Bengali articles, click

Person playing guitar

লোকটা ঘরে বসে কিছু একটা পড়ছে । অবশ্য কাছে থেকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে ওই  ‘কিছু ‘ টা উল্টো করে ধরা আর চোখের দৃষ্টি শূণ্য । অর্থাৎ আমাদের শিল্পী মশাই কিছু ভাবছেন ।

কাগজের ঠান্ডা বিজ্ঞাপন শিল্প-সত্ত্বায় উষ্ণতা এনেছে। বিজ্ঞাপনটা একটা প্রতিযোগিতার ।  লোকটা তড়াক করে লাফিয়ে উঠেছিল বিজ্ঞাপনটা দেখে । এতে একটা সংগীত -প্রতিষ্ঠান একটা বেহালা বাজানোর প্রতিযোগিতার প্রচার করেছে । এতে যেকোনো ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রেকর্ডিং ষ্টুডিওতে নিজের সৃষ্টি করা বেহালার সুরের রেকর্ডিং করতে পারবে । তাও নাম মাত্র মূল্যে। পরে সেই রেকর্ডিং করা কপি জমা দেওয়া যাবে সেই প্রতিষ্ঠানে ।

বেহালা থেকে বিমর্ষতার সুর ধ্বনিত হয় । কিছু দিনের মধ্যেই সে রেকর্ডিং স্টুডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করলো । আরো কিছু দিনের মধ্যেই সুরের প্রাথমিক পর্যায় তৈরী হয়ে গেলো । এরপর কিছু এডিট ও ফিল্টার  করে সে তার বেহালার সুরের কপি জমা দিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটিতে ।

আস্তে আস্তে ফলপ্রকাশের দিন চলে আসে। শিল্পী মশাই মনে মনে বেশ উত্তেজিত। এই কয়েকদিনে তার শারীরিক ও মানসিক  অবস্থার বেশ পরিবর্তন এসেছে ।পাঁচতারা হোটেলে বাজনা বাজাতে যায়নি সে প্রায় দু সপ্তাহ । সিগেরেট খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়েছে । গলায় খুব যন্ত্রনা আর ঘড়ঘড়ে কাশি , তার কণ্ঠরোধ করছে ।

জীবনে প্রথমবার ট্যাক্সি ডেকে শিল্পী মশাই চললেন সংগীত প্রতিষ্ঠানে । অডিটোরিয়ামে বেশ কিছুক্ষন বিভিন্ন বক্তার বক্তৃতার পর, ফলাফল ঘোষণা শুরু হয় । বক্তৃতা শোনার মতো অবস্থা তার ছিলোনা । চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছিলো । গলায় অসম্ভব জ্বালা করছিলো । ফলাফল ঘোষণার সময় প্রথমেই নিজের নাম শুনে কোনো মতে মঞ্চে ওঠে । প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক তার হাতে পদকটা তুলে দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ধড়াস করে মঞ্চে পড়ে  যায় ।  একটু হুড়োহুড়ি । একটু হইচই। তখন শিল্পী মশাই এর চোখে জল । কিন্তু মুখে হাসি । কিছুক্ষনের মধ্যেই ডাক্তার আসেন । হাতে পালস পান না ।  আর হ্যাঁ, চার আনার ছোটো কামরার বেসিনের পাইপ থেকে জল পড়ার টপ-টপ  শব্দ আর কোনো দিনও পাওয়া যায় নি ।


About Sarasij Basu Mallick

Sarasij comes from Sheakhala, a small town in the Hooghly district. He is a Mathematics geek studying at Serampore College.
Books have always fascinated him from his early childhood and they drive him to ‘think’ differently. In his words, “Yes any form of art requires thinking. But, while writing, I have to realize that thinking is not the key to good stories. Good stories go much beyond writing – It needs to explore culture – politics – history and much more! I try to encapsulate some of my thought through my writings. And, I have an irrefragable idea that one day my pen will help me to explore myself.”

Disclaimer: The opinions expressed in this post are the personal views of the author. They do not necessarily reflect the views of www.kolkatafusion.wordpress.com. Any omissions or errors are the author’s and KolkataFusion does not assume any liability or responsibility for them.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *